

সাধারণত অতিরিক্ত লোড এবং প্রকৃতিগত সমস্যার কারণে পল্লী বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়ে থাকে। আর নষ্ট হলে মেরামত বাবদ নির্দিষ্ট ফি: জমাদান সাপেক্ষে ট্রান্সফরমার পরিবর্তনের নিয়ম রয়েছে বলে জানাগেছে। আর এমন হলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে ফি: গ্রহণের রসিদও প্রদান করেন পল্লী বিদ্যুতের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। তবে নিয়ম নীতিকে তোয়াক্কা না করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি টেকনাফের জোনাল অফিস এবং সাব অফিসে কর্মরত কর্মকর্তাদের একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে গ্রাহকের কাছ থেকে ট্রান্সফরমার পরিবর্তনের নামে মোটাংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে ওই সিন্ডিকেট স্থানীয় কতিপয় অসাধু লোকদের দিয়ে গ্রাহক সাধারণকে হয়রানী করে আসছেন বলে জানাগেছে। সেবাপ্রার্থী গ্রাহকরাও নিরুপায় হয়ে পবিসের অসাধু কর্মকর্তাদের দাবীকৃত টাকা পরিশোধ করে আসছেন বলে গ্রাহকের দাবী।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, চলতি বছরের ১০জুলাই হোয়াইক্যং ইউনিয়নের পূর্ব সাতঘড়িয়াপাড়া এলাকায় টাকার বিনিময়ে ১০কেভির ১টি ট্রান্সফরমার পরিবর্তন করেন স্থানীয়রা। ওই ট্রান্সফরমার পরিবর্তনে তাদের খচর হয়েছে অন্তত: ২০হাজার টাকা। প্রতিনিধি মারফত হ্নীলা অফিসের এলটি জমির উদ্দিন সরকার উৎকোচের এই টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা। এছাড়া ২০মার্চ জাদীমুরা শালবাগান এলাকায় ১৫কেভি একটি ট্রান্সফরমার পরিবর্তনে ১৫হাজার টাকা, ১৮জুন পুর্ব মহেশখালীয়াপাড়া এলাকায় ১০কেভির একটি ট্রান্সফরমার পরিবর্তনে ২০হাজার টাকা, ২০জুলাই জাদীমুরাতে ১০ কেভির একটি ট্রান্সফরমার পাল্টাতে ১৫হাজার টাকা, ২আগষ্ট উলুচামরী এলাকায় ১০ কেভির একটি ট্রান্সফরমার পাল্টাতে ১৫হাজার টাকা, ১৯সেপ্টেম্বর লেদা জাফর মার্কেটে ১৫ কেভির ট্রান্সফরমার পরিবর্তনে ২০হাজার, এছাড়া উলুচামরী হামজার ছড়া এলাকায় ১৫ কেভির একটি ট্রান্সফরমার পরিবর্তনে ১৫হাজার টাকা উৎকোচ নিয়েছেন হ্নীলা অফিসে কর্মরত লাইন টেকনিশিয়ান জমির উদ্দিন সরকার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হ্নীলা বিদ্যুৎ অফিসে কর্মরত একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, ট্রান্সফরমার পরিবর্তন থেকে শুরু করে সবকিছুই জমির উদ্দিন সরকার নিজে নিজে করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। অফিসের কাউকে এসাইনম্যান্ট না দিয়ে এলটি জমির নিজে নিজে ছোট-বড় সব অভিযোগ সারাতে সারাদিন ব্যতিব্যস্ত থাকেন। এদিকে জহির আহমদ নামের জনৈক এক সৌদি প্রবাসীর কাছ থেকে কেবলমাত্র ট্রান্সফরমারের ফিউজ পরিবর্তনে পল্লী বিদ্যুতের জমির ৩হাজার হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। প্রবাসীর মতো অহরহ বিদ্যুৎ গ্রাহক চরম অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, এলটি জমির যোগদানের পর থেকে হ্নীলা বিদ্যুৎ অফিসের সেবার মান নি¤œমুখী। এলটি জমির হ্নীলা অফিসে যোগদানের পর থেকে টাকা না দিয়ে এই পর্যন্ত কোন গ্রাহক সেবাই পাননি বলে গ্রাহকদের অভিযোগ। দুর্নীতিবাজ পল্লী বিদ্যুতের এলটি জমির উদ্দিন সরকারের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের দাবী জানিয়েছেন সেবাপ্রার্থীসহ সংশ্লিষ্টরা।
হ্নীলা ডিস্ট্রিবিউটার সমিতির কোষাধ্যক্ষ ও মুসকানের ডিলার মো: ইসহাক জানান, ২ সপ্তাহেও ট্রান্সফরমার পরিবর্তন করতে না পারায় চরম ক্ষোভ ও দু:খ প্রকাশ করে বলেন কোটি কোটি টাকার মালামাল অন্ধকারে পড়ে আছে। বিদ্যুতের কারণে সিসি ক্যামরাও অচল হয়ে আছে। এতে দুর্ঘটনার আশংকায় রয়েছেন তিনিসহ ওই মার্কেটের অপরাপর ব্যবসায়ীরা। এই ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, হ্নীলা অফিসে কর্মরত এলটি জমির উদ্দিন সরকারকে ২০হাজার টাকা দিয়েও তারা ট্রান্সফরমার পরিবর্তনের করে দেননি। ব্যবসায়ীদের দুর্বলতা এবং প্রয়োজন অনুভব করে জমির আরো ৩০হাজার টাকা দাবী করছেন বলে জানিয়েছেন এই ব্যবসায়ী।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ টেকনাফ উপজেলা (উত্তর) শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ও হ্নীলা ডিস্ট্রিবিউটার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আজিজ জানান, হ্নীলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন মার্কেটে তাদের ৬ ব্যবসায়ীর মালামালের গো ডাউন রয়েছে। যেখানে কোটির টাকার উপরে খাদ্য সামগ্রী (মালামাল) রয়েছে। ওই মার্কেটে ১০কেভির ট্রান্সফরমার ছিলো। যা গত ২৭ নভেম্বর নষ্ট হয়ে যায়। পরের দিন ২৮ নভেম্বর বিষয়টি হ্নীলা অফিসকে অবহিত করা হয়। এত্তদিন তারা হ্নীলা-টেকনাফ অফিসে ঘুর ঘুর করেছেন। শেষ মেষ গত ৭ ডিসেম্বর এলটি জমির উদ্দিন সরকার ব্যবসায়ী আজিজের কাছ থেকে ট্রান্সফরমার পরিবর্তন করে দিবেন মর্মে ৫০হাজার টাকা দাবী করেছেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ টেকনাফ উপজেলা (উত্তর) শাখার সভাপতি মাওলানা আব্দুল খালেক নিজামী জানান, ট্রান্সফরমার পরিবর্তনের নামে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি খুবই দু:খজনক। তিনি গ্রাহক সেবা ত্বরান্বিত করতে পল্লী বিদ্যুতের এসব অনিয়ম এবং দুর্নীতি বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
ট্রান্সফরমার পরিবর্তনে অহরহ গ্রাহকের কাছ থেকে অনৈতিকভাবে উৎকোচ গ্রহণে অভিযুক্ত হ্নীলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এলটি জমির উদ্দিন সরকারের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। মোবাইলে রিং হলেও রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। হ্নীলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ইনচার্জ ও জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার সুজিত বড়–য়া জানান, আসলে অফিস কর্তৃক নির্ধারিত ফি: ব্যতীত আমাদের অগোচরে কেউ যদি নিয়ম বর্হিভুতভাবে টাকা নিয়ে থাকেন সে দ্বায়ভার তাকেই নিতে হবে। তবে তিনি বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবেন জানিয়ে দ্রুত সময়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পুরো বিষয়টি অবগত করবেন বলে জানান। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি টেকনাফের দায়িত্বে নিয়োজিত ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো: জসিম উদ্দিন জানান,গ্রাহক কর্তৃক উত্থাপিত অভিযোগ তদন্ত করা হবে। অনৈতিকভাবে গ্রাহকের কাছ থেকে কোন প্রকার টাকা গ্রহণের কোন সুযোগ নেই। তিনি অভিযুক্ত এলটির বিষয়টি তদন্ত করবেন বলে জানান। উপরোক্ত বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পল্লী বিদুৎ সমিতি কক্সবাজারের দায়িত্বে নিয়োজিত জিএম (জেনারেল ম্যানেজার) মকবুল আহমদ জানান,এমনটি হয়ে থাকলে খুবই দু:খজনক। তিনি ঘটনায় জড়িত এলটির বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন।###

পাঠকের মতামত